ইমরান হোসেন ইমন :
আধুনিকতার ছোয়ায় বগুড়ার ধুনট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। দিন বদলের সাথে সাথে বাজারে প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন সামগ্রীর ভিড়ে কমেছে এ শিল্পের কদর। তাই অসহায় ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছে এই শিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা।
একটা সময় ছিলো কুমাররা মাটি দিয়ে তৈরি সামগ্রী বোঝা করে কাঁধে ভার নিয়ে দলে দলে ছুটে চলত গ্রাম ও পাড়া মহল্লায়। মাটির তৈরী সামগ্রীর বিনিময়ে তারা ধান সংগ্রহ করে আবার সন্ধ্যায় ভারে করে বাড়ি ফিরে আসতে। ওই ধান বিক্রি করেই তাদের সংসার চলতো।
কিন্তু এখন দিন বদলে গেছে। তেমন বেচাকেনা নেই। প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে বগুড়ার ধুনট উপজেলার কুমার পরিবারগুলোর আধুনিক মেশিন ও সরঞ্জাম কিনতে পাচ্ছেননা। এখন তাদের অনেকেরই শোচনীয় অবস্থা। তাই এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই এখন বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। কুমারপাড়ার চাকা আজ আর তেমন ঘোরে না। মাটির হাঁড়ি-পাতিল, পুতুল, সরা, বাসন, কলসি, বদনার কদর প্রায় শূন্যের কোটায়।
ধুনট সদর ইউনিয়নের বিলকাজুলী গ্রামের মৃৎশিল্পী (কুমার) শ্রী মাখন পাল জানান, এক সময় নিজেদের এলাকার জমি থেকে মাটি এনে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন অনেক দূর থেকে বাড়তি দামে মাটি কিনে এনে বানাতে হয়। তাছাড়া মাটির দামও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। প্রতি ভটভটি মাটির দাম ১ হাজার টাকা ও মাটি মাড়াইয়ের জন্য ৪০০ টাকা দিতে হয়।
পৌচিবাড়ি গ্রামের শ্রীমতি লিপি পাল বলেন, বর্তমানে বাজারে প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন, সিলভার, এমনকি লোহার তৈরি সামগ্রীর কারনে মাটির তৈরী জিনিসপত্রের তেমন আর কদর নেই। তাই এই ব্যবসায় এখন আর সংসার চলে না। যা আয় হয় তা দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে সংসার চালাতে হয়। আয় না থাকলেও বাপ-ঠাকুরদার পেশা ছাড়তে পারছি না। তাই এ শিল্প নিয়েই পড়ে আছি। তবে সরকারের কাছে থেকে স্বল্প শর্তে ঋণ সহায়তা পেলে হয়ত এ পেশা চালিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান তারা।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, এই মৃৎশিল্পীদের মাটির তৈরি বিভিন্ন শো-পিস, হাড়ি, পাতিল, কলসী, টাইলস সহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন সামগ্রী তৈরি করে রফতানি করা গেলে এই পেশায় জড়িত শিল্পীরা মানবেতর জীবন থেকে সচ্ছলতায় ফিরে আসতে পারবে। তাই এ পেশার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা যদি মৃৎ শিল্পের উন্নয়নের জন্য কোন সহায়তা চায় তাহলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করা হবে।