বগুড়া প্রতিনিধি :
বগুড়ার বহুল আলোচিত নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য আনোয়ার হোসেন রানার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে দলীয় নেতাকর্মীরা। বুধবার (০৭ অক্টোবর) দুপুরে নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের সামনে আওয়ামীলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রানার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
আস্ত্রের মুখে জিম্মি ও প্রতারণা করে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে তার শাশুড়ি দেলওয়ারা বেগম গত সোমবার রাতে বগুড়া সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে আনোয়ার হোসেন রানা ও তার স্ত্রীসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
আসামিরা হলেন- আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রানা, তার স্ত্রী আকিলা সরিফা সুলতানা খানম আঞ্জুয়ারা, সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরির ম্যানেজার ক্যাশিয়ার নজরুল ইসলাম, সরিফ সিএনজি লিমিটেডের ম্যানেজার হাফিজার রহমান এবং দেলওয়ারা সেখ শরিফ উদ্দিন সুপার মার্কেটের ম্যানেজার ও রানার সহকারী তৌহিদুল ইসলাম।
বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ার মরহুম সেখ সরিফ উদ্দিনের স্ত্রী দেলওয়ারা বেগম এজাহারে উল্লেখ করেন, তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত পাঁচ বছর জামাই আনোয়ার হোসেন রানা ও মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা খানম আঞ্জুয়ারা তার বাড়িতে থাকেন। অসুস্থতার সুযোগে ও তাদের প্রস্তাবে মৌখিকভাবে বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেয়া হয় জামাইকে।
পরবর্তীতে সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরির ম্যানেজার কাম-ক্যাশিয়ার নজরুল ইসলাম, সরিফ সিএনজি লিমিটেডের ম্যানেজার হাফিজার রহমান ও দেলওয়ারা সেখ, শরিফ উদ্দিন সুপার মার্কেটের ম্যানেজার এবং রানার সহকারী তৌহিদুল ইসলাম পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতি, প্রতারণা ও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। তারা ধারালো অস্ত্রের মুখে স্ট্যাম্প, ব্যাংকের চেক, এফডিআর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়।
পরবর্তীতে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ২০১৫ সালের ১ জুন থেকে ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের এফডিআর ভেঙে ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। এছাড়া ব্যবসা ও ব্যাংক থেকে আরও ৫০ কোটি টাকা উত্তোলনের পর আত্মসাৎ করেছে জামাই আনোয়ার হোসেন রানা।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, প্রধান আসামি আনোয়ার হোসেন রানা আগ্নেয়াস্ত্র ধরে এসব তথ্য ফাঁস না করতে নিষেধ করে। হত্যার হুমকি দেয়ায় তিনি এতদিন গোপন রাখেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর জামাই আনোয়ার হোসেন রানা ও মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা খানম আঞ্জুয়ারা বিভিন্ন আসবাবপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়।
তবে আওয়ামী লীগ নেতা রানার দাবি, তার ভায়রা ও শ্যালিকারা তার শাশুড়িকে জিম্মি করে থানায় মিথ্যা মামলা দিতে বাধ্য করেছেন।
বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির জানান, সোমবার রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। এখন আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
এদিকে শাশুড়ির শতকোটি টাকা আত্মসাৎকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রানার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে দলীয় নেতাকর্মীরা। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের সামনে আনোয়ার হোসেন রানার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। তার বহিষ্কার ও শাস্তির দাবিতে এ কুশপুত্তলিকা দাহ করে দলীয় নেতাকর্মীরা।
কুশপুত্তলিকা দাহ করার কারন ব্যাখ্যা করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম শেখ জানিয়েছেন, আনোয়ার হোসেন রানা আওয়ামী লীগের পদ-পদবী ব্যবহার করে নানা ধরণের অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। এতে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। যাহা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সে আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত। আনোয়ার হোসেন রানা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বিধাদদ্ব সৃষ্টি করেছেন। এমনকি ত্যাগী নেতাকর্মীদের নামে মামলা করে। এছাড়াও হামলা-মারপিটসহ নানাভাবে অন্যায় অত্যাচার করে থাকেন। তার দ্বারা অনেক সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাই আনোয়ার হোসেন রানাকে অবিলম্বে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারসহ তার শাস্তির দাবি জানান তারা।