এম.আবদুল্লাহ সরকার, রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) থেকে :
প্রতিবন্ধী সাঈম (১৮)। রায়গঞ্জ পৌরসভা সাইফুল ইসলামের প্রথম পুত্র সে। জন্মগত ভাবেই প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করা সাঈমকে নিয়ে বড়ই চিন্তিত ছিল তার পিতা সাইফুল ইসলাম।
জন্মের পর শরীরের সকল অঙ্গ ঠিক থাকলেও ঠিক ছিল না তার দুটি পা। পায়ের উপরের অংশ ভালো থাকলেও নিচের দুইটি অংশ ছিল খুবই অকেজো। একারনে অন্যের সাহায্য ছাড়া সাঈম একচুলও হাঁটতে পারে না। এখনও তেমনি ভাবেই চলতে হয়।
স্থানীয় পৌরসভা থেকে পাওয়া একটি হুইল চেয়ার তার চলার একমাত্র সঙ্গী। তার বাবা সাইফুল বলেন, একটা সময় সাঈমকে ভর্তি করে দেওয়া হয় স্থানীয় একটি মাদ্রাসায়।
নিজে নিজে চলতে পারে না বলে সেখানে তার আর পড়াশোনা হয়নি। পরে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন পিতা সাইফুল ইসলাম। সেখানেও বেশি পড়া হয়নি তার। এরমধ্য সাইফুলের ঘরে পর পর চার সন্তান জন্ম নেয়। ২ ছেলে ২ মেয়ের মধ্য সাঈম প্রতিবন্ধী হওয়ায় সকলের দৃষ্টি ছিল ওর প্রতি।
বাবা সাইফুল এবং ছোট ছেলে নাইমের সহযোগিতায় সাইম এখন একজন মুদি ব্যবসায়ী। ভাই ভাই স্টোর নামে তার দোকানটি এখন রায়গঞ্জ পৌরসভার মূল কেন্দ্র ধানগড়া বাজারের মধ্যে অবস্থিত।
সাইমকে তার বাবা এবং ছোট ভাই নাঈম সহযোগিতা করে থাকে। ছোট ভাই নাঈম একজন কাঁচামাল ব্যবসায়ী। সাঈম সকালে ঘুম থেকে উঠে হুইল চেয়ারে বসে অন্যের সহযোগিতায় এসে দোকানের শাটার খুলে বসে পড়ে দোকানে। সারাদিন চলে বেচা কেনা। হাতের নাগালেই প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সাজিয়ে রেখেছে সে। দোকানে প্রয়োজনীয় সব ধরনের মালামাল আছে। প্রতিদিন তার দোকানে ৫/৬ হাজার টাকা বেচা কেনা হয়। মালামাল খরিদের জন্য তার বাবা তাকে সাহায্য করে আসছে।
সাঈম জানায়, সে আর কারো বোঝা নয়। এখন সে ব্যবসার মাঝেই নিজের ভবিষ্যতের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। এখন একটা স্বপ্ন নিয়ে বেচে থাকার চেষ্টায় মত্ত থাকবে সে।
সাঈমের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, বয়স বাড়ার সাথে সাথে একটা সময় হতাশ হয়ে পড়েছিল সে। কিন্তু সময় এবং জীবনের প্রয়োজনে তার বাবা এবং ছোটভাই মিলে পৌর শহরের মধ্য পৌর মার্কেটের একটা ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি চালু হলে সেই হতাশা কেটে যায় তার । এখন তার মনে অনেক সুখ। প্রতিদিনের বেচা কেনায় তার স্বপ্নের ডালপালাও বাড়ছে বলে জানান প্রতিবন্ধী সাঈম।