শাহজাহান আলী, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে :
শীতের আগমনে সরগরম হয়ে উঠেছে কম্বল পল্লী বলে খ্যাত কাজিপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের শিমুলদাইড় বাজার সহ প্রায় ১০টি গ্রাম। ওই সকল গ্রামের প্রায় ১০ হাজারেরও অধিক কারিগর ও তাদের পরিজনরা এখন কম্বল তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গ্রামের পরিবার গুলোর মাঝে শীত যেন সৌভাগ্যের বারতা নিয়ে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে আসে।
সরেজমিনে জানা গেছে, কাজিপুর উপজেলার শিমুলদাইড় বাজার, কুনকুনিয়া, বরশিভাঙ্গা, শ্যামপুর, গাড়াবেড়, মাইজবাড়ি, চালিতাডাঙ্গা, মেঘাই সহ প্রায় ১০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজারেরও অধিক কারিগর স্থানীয় ভাবে ‘পা’ মেশিন দিয়ে কম্বল তৈরি করছে।
কারিগররা গারমেন্টস এর ঝুট কাপর বা টুকরো কাপড় সেলাই করে কম্বল তৈরি করে থাকেন। প্রতিদিন প্রতিজন শ্রমিক ২ থেকে ৩টা পর্যন্ত কম্বল তৈরি করে থাকে। একেকটি কম্বল তৈরিতে মজুরী বাবদ ৫০/৬০ টাকা করে পেয়ে থাকেন কারিগররা।
গৃহস্থলীর কাজের ফাঁকে শীত মৌসুমে পরিবারের ছেলে মেয়েরা সকলেই মিলে মিশে কম্বল সেলাইয়ে ব্যস্ত থাকে। ফলে পরিবারের সকলে মিলে শীত মৌসুমে সংসারে বাড়তি আয় করে থাকেন।
কথা হয় কম্বল তৈরির কারিগর কুনকুনিয়া গ্রামের মোমেনা বেগমের সাথে। মোমেনা বেগমের দুই ছেলে এক মেয়ে। মেয়ে ৪র্থ শ্রেনীতে পড়ে। করোনাকালে স্কুল বন্ধ তাই মায়ের সেলাইয়ের কাজে দাদির সাথে টুকরো কাপর গুছিয়ে মাকে কম্বল তৈরিতে সহযোগিতা করছে।
মোমেনা বেগমের স্বামি রুস্তম আলী শিমুল-দাইড় বাজারে পাওয়ার মেশীনে কাজ করেন, সেখানে তার প্রতিদিন ৭/৮ শ টাকার মত আয় রোজগার হয়। আর এভাবেই দুই ছেলে ও মেয়েকে লেখাপড়া করাতে রুস্তম আলীর আর কোন বেগ পেতে হচ্ছে না।
তবে আত্মসামাজিক উন্নয়নের এই গল্প কাজিপুরের কুনকুনিয়ার শুধু রুস্তমের পরিবারের একার নয়, এই গল্প কম্বল পল্লীর শীতের এই মৌসুমের সহস্রাধিক পরিবারের।
তবে পা মেশিন ছাড়াও শিমুলদাইড় বাজারে রয়েছে প্রায় দেড়শ’র মত যন্ত্র চালিত পাওয়ার মেশিন। পাওয়ার মেশিনের কর্মরত আফজাল হোসেন জানান, পাওয়ার মেশিনে প্রতিদিন ৪ জন কারিগর কাজ করে থকেন। প্রতিদিন ৪জন কারিগর মিলে একটি পাওয়ার মেশিনের আওতায় প্রায় ৯শ থেকে ১ হাজার পিস কম্বল তৈরি করতে পারে।
এক্ষেত্রে কারিগররা প্রতিজন ৬/৭ শ টাকা আয় করে থাকেন। শিমুল দাইড় বাজার সহ আশপাশে মিলে দেড়শ পাওয়ার মেশিনে স্থানীয় মহাজনেরা একনাগারে কম্বল তৈরি করে বিক্রয়ের আশায় জমা করছেন। আবার কোন কোন মহাজন কম বেশী বেচা বিক্রিও করছেন।
কাজিপুরের শিমুল দাইড় গ্রামের তৈরি কম্বল ইতিমধ্যে স্থানীয় চাহিদার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিশেষ করে শীতের এলাকা সমুহ যেমন রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও থেকে ব্যাপারী বা মহাজনরা এসে কম্বল ক্রয় করে থাকেন।
শিমুলদাইড় বাজার কমিটির সভাপতি আবু তাহের জানান, এক সময় এই ব্যবসাটি স্থানীয় পর্যায়ে হলেও সময়ের ব্যবধানে এর পরিধি বেড়ে সারা দেশব্যাপি বিস্তার লাভ করেছে। শীতের মৌসুমে শতকোটি টাকার কম্বল ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। কিন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা না থাকায় ব্যাপারি মহাজনদের টাকা লেনদেন নিয়ে ঝামেলা প্রহাতে হয়। এছাড়া রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার কারনে মালামাল পরিবহনের দূর্ভোগ পোহাতে হয়।