বগুড়া প্রতিনিধি :
বগুড়া সহ উত্তরাঞ্চলে তাইওয়ান, উত্তর ও দক্ষিন কোরিয়া ও জাপানের পুরাতন শীত বস্ত্রের ভ্রাম্যমাণ দোকানে এখন উপচে পড়া ভীড়। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় কম মূল্যের ওইসব দোকানে শীতের কাপড় কিনতে স্বল্প আয়ের মানুষ ঝুঁকে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কমমুল্যে পুরাতন ভ্রাম্যমান দোকানে শীত বস্ত্র কিনতে শুধু স্বল্প আয়ের মানুষ নয়, মধ্যবিত্তরাও এখন পুরাতন শীত বস্ত্র কিনতে ভিড় জমিয়েছে।
বগুড়া শহরের সাতমাথা, রেলওয়ে হকার্স মার্কের পাশে, রেল লাইনের দু’পাশে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লোকজন পুরানো শীত বস্ত্র দোকানে ভিড় করছে। সব বয়সীদের শীত বস্ত্র ওই সব জায়গায় বিক্রি হচ্ছে। ১০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এসব শীত বস্ত্র। পাইকারী দোকানীরা এ সব শীত বস্ত্রকে রি-কন্ডিশন গাড়ীর সাথে তুলনা করে থাকে।
দোকানীরা বলেন, ওই সব দেশের লোকরা এক বছরের বেশী এসব শীত বস্ত্র ব্যাবহার করেনা। যেমন রি- কন্ডিশন গাড়ী।
রেল লাইন হাড্ডি পট্টিতে কথা হলো ভ্রাম্যমান শীত বস্ত্র বিক্রেতা আমজাদ হোসেনের সাথে।
তিনি জানালেন, শিশুদের শীত বস্ত্র ১০ টাকা থেকে একশ টাকায় বিক্রি করছেন। ক্রেতাও অনেক। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার শীত বস্ত্র বিক্রি করছেন। ধনী গরীব সবাই আমাদের ক্রেতা।
হাড্ডি পট্টির কর্মচারী সোবহান জানান, জ্যাকেট ৫০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রী করছি। সাতমাথার রাজু জানান, সোয়েটার ২০ টাকা থেকে ৫ শ টাকায় বিক্রী করছি। ক্রেতাও অনেক।
শহরের জ্বলেশ্বরীতলার সাবিহা নামের এক ক্রেতা জানান, অনেকটা নুতন মনে হয় এ সব গরম কাপড়। দামও কম কিন্তু মানের দিক থেকে অনেক ভালো। এ সব পুরাতন কাপড় না থাকে গরীব মানুষের খুবই কষ্ট হতো।
বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় ভ্রাম্যমান দোকানে আরেক ক্রেতা ইলিয়াস বললেন, পুরাতন কাপড় সবাই বললেও ক্রেতারা গরমের জন্য এ সব কাপড় বেশী পছন্দ করে।
পুরাতন শীত কাপড়ের আমদানী কারক রংপুরের সাবিহুল হক জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘৭১ সাল থেকে এএসব পুরাতন শীত কাপড় তার বাবা বিদেশ থেকে আমদানী করে আসছে।
উত্তরাঞ্চলের রংপুর থেকেই প্রথম এসব কাপড়ের ব্যবসা শুরু হয়। পরে ছড়িয়ে পড়ে বগুড়া সহ অন্য জেলায়। উত্তরের গরীব মানুষের ভরসা কম মুল্যের পুরাতন এসব কাপড়। দেশের শীত প্রধান এলাকা রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, লালমনির হাটের বিক্রেতারা পাইকারী ভাবে বেল্ট কিনে বিক্রি করছে। মানের দিক থেকে খুবই ভালো। ডিজাইনও আধুনিক। কিছু জ্যাকেট, সোয়েটা, কোট দেখে বোঝার উপায় নেই এ সব পুরাতন। ঠিক রি-কন্ডিশন আমদানী করা গাড়ীর মত।
পাইকারী বিক্রেতা ইদ্রিস আলী জানান, আশির দশক থেকে পুরাতন শীত কাপড়ের ব্যাবসা করছি। চট্টগ্রামের বেশ কিছু ব্যাবসায়ী এ সব পুরাতন শীত কাপড় আমদানী করে থাকে। তাদের কাছ থেকে আমরা বেল্ট হিসেবে কিনে এনে বগুড়া, নওগা, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, চাপাই নবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা জেলায় বিক্রি করে থাকি।
তারা ওইসব কাপড় খুচরা হিসেবে শহর, উপজেলা সহ ইউনিয়ন পর্যায়ে বিক্রি করে। জ্যাকেট প্রতি বেল্ট পাইকারী ১২ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা, সোয়েটার প্রতি বেল্ট ৭ হাজার থেকে ১১ হাজার, শিশুদের কাপড় ৮ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকায় কেনা হয়। আগে ইংল্যান্ড, আমেরিকা সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এসব কাপড় আমদানী করা হলেও এখন তাইওয়ান, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিন কোরিয়া, জাপান থেকে এ সব শীতের কাপড় আসছে।