ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়ার ধুনটে স্বামীর লাগিয়ে দেয়া আগুনে রবিনা খাতুন (২৫) নামে এক গৃহবধূর শরীর, হাত ও পা ঝলসে গেছে। এদিকে স্বামীর লাগিয়ে দেয়া আগুনে ঝলসে গেলেও চিকিৎসা না দিয়ে ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন চালায় পাষন্ড স্বামী মোমিন তালুকদার (৩০)। অবশেষে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পাঁচ দিন পর স্বামীর জিম্মিদশা থেকে নির্যাতিত ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে ধুনট হাসপাতালে ভর্তি করেছে তার স্বজনেরা।
ঘটনাটি ঘটেছে ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের দিঘলকান্দি গ্রামে।
এঘটনায় বুধবার (২৪ মার্চ) ওই গৃহবধূর বাবা হোসেন আলী বাদী হয়ে জামাই মোমিন তালুকদারকে আসামী করে ধুনট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ ও স্থানীয়সূত্রে জানাগেছে, ধুনট উপজেলার দিঘলকান্দি দক্ষিণপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক হাসেন আলীর মেয়ে রবিনা খাতুনের সঙ্গে প্রায় ১০ বছর আগে একই গ্রামের মৃত সামাদ তালুকদারের ছেলে মোমিন তালুকদারের বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। কিন্তু ৩/৪ বছর ধরে মোমিন তালুকদার কারনে-অকারনে রবিনা খাতুনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এসব বিষয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ দরবার হলেও মোমিন তালুকদার তার নির্যাতন বন্ধ করেননি।
এমতাবস্থায় গত ১৭ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টার দিকে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মোমিন তার হাতে থাকা মাছ মারার কাজে ব্যবহৃত মশালের আগুন রবিনা খাতুনের শরীরে লাগিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের কিছু অংশ এবং বাম হাত ও বাম পা আগুনে পুড়ে ঝলসে যায়। তখন সংবাদ পেয়ে রবিনা খাতুনের স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করতে গেলেও পাষন্ড স্বামী মোমিন তাদেরকে বাধা দিয়ে ঘরে আটকে রাখে। এরূপঅবস্থায় স্বামীর নির্যাতনে বিনা চিকিৎসায় পাঁচ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিল রবিনা।
গত ২২ মার্চ রবিনা খাতুন মৃত্যু যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে নিজেই চিকিৎসকের কাছে যেতে চাইলে স্বামী মোমিন তাকে আবারও বেধরক পিটিয়ে আহত করে। পরে সংবাদ পেয়ে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় স্বামীর জিম্মিদশা থেকে মুমুর্ষ অবস্থায় রবিনা খাতুনকে উদ্ধার করে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে তার স্বজনেরা। এঘটনায় বুধবার (২৪ মার্চ) ওই গৃহবধূর বাবা হোসেন আলী বাদী হয়ে জামাই মোমিন তালুকদারকে আসামী করে ধুনট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
রবিনা খাতুনের বাবা হোসেন আলী বলেন, আমার মেয়েকে প্রায়ই নির্যাতন চালায় মোমিন। একপর্যায়ে সে আমার মেয়েকে হত্যা করতে তার শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে আমার মেয়ের শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে ঝলসে যায়। তারপরও আমার মেয়েকে বিনা চিকিৎসায় ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন চালায় মোমিন।
পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় আমার মেয়েকে উদ্ধার করে ধুনট হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এঘটনায় পাষন্ড জামাই মোমিনকে আসামী করে ধুনট থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি এঘটনার কঠিন বিচার দাবি করেছেন।
এবিষয়ে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, সংবাদ পেয়ে ওই গৃহবধূর চিকিৎসার খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।