ওয়াহিদ হাসান, বিজ্ঞান ও সাহিত্য বিষয়ক রিপোর্টার, অনুসন্ধান বার্তা, ঢাকা অফিস :
১৯৭৭ সালে হাবল টেলিস্কোপ মহাকাশে পাঠানো হয়। সেটি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেছে। এর উদ্দেশ্য ছিল আমাদের মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে জানা। যাত্রার প্রথমে হাবলের কিছু সমস্যা হলেও এক সময় তা মেরামত করা হয় এবং ঠিক মত কাজ করতে আরম্ভ করে আর জ্যোতির্বিদ সম্প্রদায় সহ পুরো বিশ্বকে চমকে দেয়। হাবল টেলিস্কোপ মহাকাশের বিন্দু পরিমান একটি জায়গা কিছু সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করে যেই চিত্রধারন করে তা পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়।
এই সেই বিশ্ব বিখ্যাত চিত্র। একে বলা হয় হাবল ডীপ ফিল্ড চিত্র। এই চিত্রে প্রতিটি বিন্দু এক একটি ছায়া পথ বা গ্যালাক্সি। এই চিত্রটি জুগ জুগ ধরে জ্যোতির্বিদগণকে উৎসাহিত করে আসছে আরও উন্নত এবং শক্তিশালী টেলিস্কোপ তৈরি করতে। তার সাথে সাথে আমাদের মহাবিশ্বকে জানতে। তাই নাসা ও ইসা যৌথভাবে নতুন একটি টেলিস্কোপ তৈরির কাজে লেগে যায়। এই টেলিস্কোপটির নাম জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।
হাবলের সফলতার পরপরই বিজ্ঞানীরা মানব সভ্যতার সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ নির্মাণের কাজে লেগেজান। ১৯৯৭ সালে প্রথম এই টেলিস্কোপটির নকশা শুরু করা হয়। ২০০২ সালে নাসার ২য় প্রশাসক জেমস ওয়েব এর নামে এর নামকরণ করা হয়। তিনি ছিলেন নাসার একজন প্রাক্তন প্রশাসক যিনি কয়েকটি মহাকাশ মিশন সম্পন্ন করেছিলেন।
২০০৫ সালে নতুন প্রজন্মেও এই টেলিস্কোপটির ব্যয় অনুমান করা হয় চারশো পঞ্চাশ কোটি (৪.৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার। কিন্তু এর কাজের বিকাশের সাথে সাথে এর ব্যয় আরও বাড়তে থেকে। ২০০৭ সালে এর নকশা এবং প্রযুক্তিগত সব সরঞ্জাম পরীক্ষামূলকভাবে পাস করলে টেলিস্কোপটির তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালে এর ডিজাইন সম্পন্ন হয়। ২০১৫ সালে টেলিস্কোপটি উত্থাপনের লক্ষে এর টেস্টিং শুরু হয়।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ। এটি সর্ববৃহৎ মহাকাশ টেলিস্কোপ। এর পূর্বে হাবল ও এই টেলিস্কোপ এর মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। হাবল টেলিস্কোপের প্রাথমিক আয়নার ব্যাস ২.৪ মিটার বা ৭.৮ ফুট। সেই তুলনায় জেমস ওয়েবের প্রাথমিক আয়নার ব্যাস ৬.৫ মিটার বা ২১.৪ ফুট।
হাবল টেলিস্কোপ পৃথিবী থেকে ৫৭০ কিলোমিটার দূরে প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ্য কিলোমিটার দূরে প্রদক্ষিণ করবে। একে লাগ্রাঞ্জ-২ পয়েন্ট বলা হয়। এই দূরত্বে সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ একে অপরকে বাতিল করে দেয়। তাই লাগ্রাঞ্জ-২ পয়েন্টে টেলিস্কোপটি কোন আকর্ষণ অনুভব করবেনা। লাগ্রাঞ্জ-২ পয়েন্ট একটি পারকিং জায়গার মত ধরা হয়।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের উত্থাপন ২০১৫ সালে হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন টেকনিক্যাল সমস্যার কারনে তা পিছাতে থাকে। টেলিস্কোপটির উত্থাপনের তারিখ বারবার পেছানোর কারন হচ্ছে এক বার নিক্ষেপ করা হয়ে গেলে আর এটির নাগাল পাওয়া সম্ভব হয় না। হাবল পৃথিবীর অনেক কাছে বিধায় বারবার এর মেরামতের কাজ করা সম্ভব হয়েছে।
সুত্রঃ ১। নাসা ওয়েবসাইট। https://www.nasa.gov/ ২। ইসা ওয়েবসাইট https://www.esa.int
কিন্তু জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ১৫ লক্ষ্য কিলোমিটার দূরে প্রদক্ষিণ করবে বলে কোন মানুষ এর কাছে পৌছাতে পারবে না। অন্তত নিকট ভবিষ্যেত নয়। ২০২০ সালে এর উত্থাপনের কথা থাকলেও পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৩১ই অক্টোবর এর সর্বশেষ উত্থাপনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
জেমসওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ মানব ইতিহাসের বৃহত্তম মহাকাশ ভিত্তিক টেলিস্কোপ। এর সাহায্যে আমরা অজানাকে জানতে পারব। দেখতে পারব সেই সব চিত্র যা কোন দিন মানুষের পক্ষে দেখা সম্ভব হয়নি।