ওয়াহিদ হাসান, বিজ্ঞান বিষয়ক রিপোর্টার, অনুসন্ধান বার্তা, ঢাকা অফিস :
বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই জ্যোতির্বিদ্যার একটি প্রধান কেন্দ্রবিন্দু, ‘প্রাণের অস্তিত্ব খুজে বের করা’। এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে আমরাইকি একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে জ্যোতির্বিদগণ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। আজ পর্যন্ত প্রায় তিনহাজার গ্রহকে সম্ভাব্য বাসযোগ্য গ্রহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু সম্ভাব্য প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। আমাদের আপন সৌরজগতের মধ্যে এই প্রথম পৃথিবী ছাড়া দ্বিতীয় কোন গ্রহের বায়ুমণ্ডলে সম্ভাব্য প্রাণের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
বিগত ১৪ই সেপ্টেম্বর বিশ্বের স্বনামধন্য কয়েকজন জ্যোতির্বিদ মিলে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন যেখানে বলা হয় “বুধ গ্রহের বায়ুমণ্ডলে ফসফিন গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে।”এইপ্রকাশ বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মাঝে তুমুল আলোড়ন ছড়ায়। বিশ্বের সব স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক পত্রিকায় এই উদ্ঘাটনের কথা ছাপা হয়। ফসফিন গ্যাসমুলত একটি বিষাক্ত গ্যাস কিন্তু পৃথিবীর মত পাথুওে গ্রহে শুধুমাত্র জৈবনিক প্রক্রিয়া অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু দ্বারা এর গ্যাস তৈরি হয়। বুধগ্রহ ও পৃথিবীর মত একটি পাথুরে গ্রহ। তাই ফসফিনের উদ্ঘাটন একটি নিঃসন্দেহে একটি বিস্ময়কর ঘটনা।
বুধ ও পৃথিবীর মধ্যে মিল থাকলেও বুধগ্রহ অত্যন্ত উত্তপ্ত একটি গ্রহ। বুধ গ্রহের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৪৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা বসবাসের অযোগ্য। কিন্তু পৃষ্ঠ থেকে ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা প্রানের অস্তিত্ব ধারন করতে পারে। বুধের বায়ুমণ্ডল বিষাক্ত এসিডে পরিপূর্ণ। কিন্তু তবুও পর্যাপ্ত ফসফিনের উপস্থিতি জ্যোতির্বিদগণের সন্দেহের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গবেষণা পত্রটির প্রধান সম্পাদক জেনগ্রিভস, কারদিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যোতির্বিদ এবং আরও কয়েকজন আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ বুধ গ্রহে ফসফিন গ্যাসের সন্ধানে পৃথিবীতে অবস্থিত রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করেন। হাওয়াইতে অবস্থিত জেমস ক্লার্কমাক্সয়েল টেলিস্কোপ এবং চিলির আটাকামা র্লাজ মিলিমিটার অ্যারে টেলিস্কোপ ব্যবহার করে তারা এই অভাবনীয় উদ্ঘাটন করেন। জ্যোতির্বিদগণবলেন, “আমরা তথ্য বিশ্লেষণ করিনি ঃ সন্দেহে বলতে পারি যে এটা ফসফিন গ্যাস।”
কিছু কিছু প্রাকৃতিক কারনেও ফসফিন গ্যাস তৈরি হয়। যেমন উচ্চ তাপমাত্রায় বিদ্যুৎ চমকানো, আগ্নেওগিরি ইত্যাদি। কিন্তু গবেষকরা বলেন যে বুধের পৃষ্ঠ থেকে এত উচ্চতায় প্রাকৃতিক কারনে এই গ্যাস তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বুধ গ্রহে কি সত্যিই প্রাণের অস্তিত্ব আছে? এই প্রশ্নের জবাবে জেন বলেন, “আমি সত্যিই আশা করছি যেন প্রাণের অস্তিত্ব থাকে। কিন্তু বুধ গ্রহের বায়ুমণ্ডল থেকে নমুনা বিশ্লেষণ না করা পর্যন্ত নিঃসন্দেহে তা বলা যাচ্ছেনা।”